তাবলিগ জামাতকে নিষিদ্ধ করেছে সৌদি আরব, ‘সন্ত্রাসের দরজা’ আখ্যা

0
747
তাবলিগ জামাতকে নিষিদ্ধ করেছে সৌদি আরব, ‘সন্ত্রাসের দরজা’ আখ্যা

পৃথিবীর সব মানুষকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার আন্দোলন তাবলিগ জামাতকে ‘সন্ত্রাসবাদের অন্যতম দরজা’ আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ করেছে সৌদি আরব।

সৌদি আরবের ইসলামি বিষয়ক মন্ত্রণালয় টুইট করেছে, ‘মহামান্য ইসলামি বিষয়ক মন্ত্রী ড. আব্দুল লাতিফ আলশেখ যেসব মসজিদে জুমার নামাজ হয় সেসব মসজিদকে অস্থায়ীভাবে পরের জুমার খুতবাকে তাবলীগ জামাতের বিরুদ্ধে সতর্ক করার জন্য বরাদ্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন’।

সৌদি সরকার মসজিদের ইমামদের জনগণকে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন যে, সৌদি আরবে তাবলিগী এবং দাওয়াহ গ্রুপসহ দলীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে অংশীদারিত্ব নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তাবলিগ জামাত বিশ্বের অনেক অংশেই ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কারণ ইসলামকে ‘শুদ্ধ’ করার জন্য ভারতে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের অর্থের মূল উৎস ছিল সৌদি আরবের দাতব্য সংস্থাগুলো। আরও কিছু দেশের সরকারও সৌদি আরবকে অনুসরণ করে তাবলিগকে নিষিদ্ধ করতে পারে। তবে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে তাবলিগ নিষিদ্ধ করা কঠিন হতে পারে। কারণ এসব দেশে প্রচুর তাবলিগী জনসংখ্যা রয়েছে।

আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে ইসলামকে ‘শুদ্ধ’ করার লক্ষ্য নিয়ে ভারতে শুরু হয়েছিল তাবলিগ আন্দোলন। মোহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভি নামের এক ইসলামি আলেম ‘বিশুদ্ধ’ ইসলামে ফিরে আসার প্রচার শুরু করার মধ্য দিয়ে এই আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। এই আন্দোলনের একটি উদ্দেশ্য ছিল ভারতে হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত মুসলিমদেরকে তাদের হিন্দু অতীত থেকে আসা অভ্যাস ত্যাগ করার জন্য উৎসাহিত করা। মুসলিম হওয়ার পরেও তাদের মধ্যে যেসব হিন্দু সাংস্কৃতিক অভ্যাস অব্যাহত ছিল সেসব থেকে মুক্ত করা।

মোহাম্মদ ইলিয়াস সর্বপ্রথম উত্তর-পশ্চিম ভারতের মেওয়াত অঞ্চলে তার প্রচারাভিযান শুরু করেন, যেখানে অনেক ধর্মান্তরিত মুসলিম আর্য সমাজের ‘শুদ্ধি’ প্রচারণার ফলে পুনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরে যাচ্ছিলেন। হিন্দুদের ওই ‘শুদ্ধি’ প্রচারণাই বর্তমান ‘ঘর ওয়াপসি’-র আসল সংস্করণ। ‘ঘর ওয়াপসি’-র মাধ্যমেও ইসলামে ধর্মান্তরতি বহু হিন্দুকে এখন পুনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

তাবলিগ জামাত অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল। সৌদি আরবের বিভিন্ন দাতা সংস্থার অর্থ সাহাজ্য তাদের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ‘বিশুদ্ধ’ ইসলামের দিকে ফিরে যাওয়ার আন্দোলনকে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিশুদ্ধতাবাদ এবং কঠোরতার প্রতি তাদের জেদকে জঙ্গিবাদের উৎস হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

সৌদি আরবের শাসকগোষ্ঠী ওয়াহাবিরাও তাবলিগীদের বিরোধিতা করে। ওয়াহাবিরা তাবলিগীদেরকে ‘কবর পুজারি’ বলে অভিযুক্ত করে। ২০১৬ সালে সৌদি আরবের প্রাক্তন গ্র্যান্ড মুফতি আবদ-আল-আজিজ ইবনে বাজ তাবলিগী জামায়াতের বিরুদ্ধে একটি ফতোয়া জারি করেছিলেন। যেখানে তাবলিগীদের বিরুদ্ধে ‘ধর্মদ্রোহিতা’ এবং ‘মূর্তিপূজার’ অভিযোগে আনা হয়েছিল। তাবলিগ জামাতকে সমাজের জন্য একটি হুমকি হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছে।-দেশরূপান্তর.কম