ময়মনসিংহে নাতির হাতে দাদা নিহত, আদালতে স্বীকারোক্তি

এম এ আজিজ, ময়মনসিংহ

0
379

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় জমি বিক্রি করে নাতিকে টাকার মা দেওয়ার আক্রোশে বয়োবৃদ্ধ দাদাকে হত্যা করে। নিহতের নাম আব্দুর রশিদ। পরে লাশ গুম করতে ঘরের মেঝেতে পুতে রাখে। গত (১০ নভেম্বর) রাতে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। গোয়েন্দা পুলিশ গত ১৫ নভেম্বর নিহতের লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশ ঘাতক নাতি মঞ্জুরুল ইসলাম বিজয় বাবুকে গ্রেফতার করে। বাবু হত্যাকান্ডে নিজেকে জড়িয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে।

ডিবির ওসি সফিকুল ইসলাম জানান, মুক্তাগাছার হরিপুর দেউলির আব্দুর রশিদ (৬৫) গত ১০ নভেম্বর নিখোঁজ হলে চারদিকে আত্মীয়-স্বজনরা খোঁজাখুজি করে। ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় আব্দুর রশিদের ঘরের চারদিকে পচা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরলে প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনরা এসে ঘরের তালা ভেঙ্গে দেখতে পায়, মাটিতে পুঁতে রাখা লাশ পঁচে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে।

জেলা গোয়েন্দা শাখা, মুক্তাগাছা পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আহমার উজ্জামানের নির্দেশে মুক্তাগাছা থানা পুলিশকে সহায়তা করতে নৃশংষ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে সর্ম্পৃক্ত হয়। আব্দুর রশিদের হত্যার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারীকে খুঁজে বের করতে ডিবি পুলিশ ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে। গোয়েন্দা পুলিশের এসআই আজগর আলী, সঙ্গীয় অফিসার ফোর্স নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারী সনাক্ত করেন।

ওসি আরো জানান, নিহত আব্দুর রশিদ দীর্ঘদিন যাবৎ বিপত্নীক জীবন যাপন করেন। বাব-মায়ের বিচ্ছেদের কারনে অনাদরে থাকা তার নাতি বাবু (১৯) কে আদরে-যত্ন, কোলে-পিঠে করে লালন-পালন করেন। আব্দুর রশিদ প্রায় ১ বছর পূর্বে আদরের নাতি বাবুকে বিয়ে করিয়ে নাতি বৌ ঘরে তুলে আনেন। বেকার নাতিকে উপার্জনের তাগিদ দিলে বাবু ক্ষেপে গিয়ে তার নব বধুকে বাপের বাড়ী পাঠিয়ে দেয় এবং জমি বিক্রি করে টাকা দেওয়ার জন্য দাদা আব্দুর রশিদকে উল্টো চাপ দেয়। দাদা জমি বিক্রি করে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বাবু তার দাদাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

ওসি সফিকুল ইসলাম বলেন, ডিবি পুলিশ বাবুকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকান্ডের বিষয়ে স্বীকারোক্তি প্রদান এবং হত্যার বর্ণনা করে। আসামী বাবুর বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, ঘটনার দিন রাত অনুমান ৯ টার দিকে রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে আব্দুর রশিদের সাথে বাবু ঘুমিয়ে পরে। পূর্ব পরিকল্পনা মতে বাবু তার দাদাকে হত্যার জন্য গভীর রাতে ঘরে রক্ষিত লোহার শাবল দিয়ে ঘুমন্ত দাদা আব্দুর রশিদের মাথায় ও শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করে। আব্দুর রশিদ অচেতন ও আঘাতের কারনে নিথর হয়ে পরলে ঘাতক বাবু তার দাদার মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে হত্যাকান্ডটি লোক চোখের আড়ালে নিতে ও নিজেকে হত্যার দায় থেকে রক্ষা করতে শাবল দিয়ে মাটি খুঁরে ঘরের মধ্যে লাশ মাটিচাপা দিয়ে রাখে।

রাত শেষ হলে ঘাতক বাবু দাদা আব্দুর রশিদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নিয়ে জনৈক ফাতেমা খাতুনের কাছে বিক্রি করে। পুলিশ ঘাতকের দেওয়া স্বীকারোক্তি মতে ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত শাবল ও নিহত আব্দুর রশিদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। বাবুকে আদালতে পাঠানো হলে সে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে বলে পুলিশ জানায়।